দেশের কার্টুনিস্ট, মিমারদের হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয় মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী সারা হোসেন বলেছেন, একটা মানুষ কার্টুন আঁকলে, মিম বানালে তার নামে মামলা দেওয়া ও জেলে পাঠানোর চর্চা থেকে আমাদের বের হতে হবে। শুধু নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্র সম্ভব হয় না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মানুষের মতামতকে সম্মান করতে হয়।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘স্যাটায়ার, মিম ও কার্টুন: মতপ্রকাশ নাকি মর্যাদাহানি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সারা হোসেন এসব কথা বলেন।
সারা হোসেন আরও বলেন, গণতান্ত্রিক চর্চার সবচেয়ে বড় উপাদান হলো অন্যদের কথা শোনা। তর্ক-বিতর্কে জড়ানো। তাদের কথাও শোনা যাদের কথা আপনার সহ্য হয় না, নিজের ওই সহনশীলতা চর্চা করা।
মিম কার্টুনের গুরুত্ব হচ্ছে, যাদের সঙ্গে সমান ক্ষমতার জায়গায় আপনি নেই, তাদের আপনি প্রতিরোধ করতে পারছেন, তাদের প্রশ্ন করতে পারছেন। সেজন্য সমাজে মিম ও কার্টুনের একটা স্পেস থাকা দরকার। কিন্তু তার মধ্যে সম্প্রতি এই মামলাটা দিয়ে এইগুলোকে সংকীর্ণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্যাটায়ারধর্মী ফেসবুক পেজ ‘e-আরকি’ এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্যাটায়ার, মিম, কার্টুন বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে দীর্ঘদিন ধরে মতপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিগত সরকারের আমলেও যখন নানান বাধার কারণে মূলধারার বেশিরভাগ গণমাধ্যম নীরব ছিল তখনও ঝুঁকি নিয়ে সরকারের সমালোচনা করে গেছে মিম, স্যাটায়ার ও কার্টুন পেজগুলো। জুলাই গণভ্যুত্থানের সময়েও আমরা দেখেছি, আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল মিম, কার্টুন ও স্যাটায়ার। মিম, কার্টুন, গ্রাফিতি আর স্যাটায়ারে ভরে উঠেছিল শহরের দেয়াল। জুলাইয়ের পরও থেমে থাকেনি স্যাটায়ার। ক্ষমতাবানদের নিয়মিত প্রশ্ন করে গেছেন স্যাটায়ারিস্ট, মিমার, কার্টুনিস্টরা। হ্যাঁ, তাদের নিজস্ব ‘হাতিয়ারের’ মাধ্যমেই।
গত ২ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি সাদিক কায়েম বাদী হয়ে বেশকিছু মিম, স্যাটায়ার ও কার্টুন পেজের নামে মামলা দায়ের করেছেন। মিম পেজগুলোর নামে এই মামলা মতপ্রকাশ ও বাক-স্বাধীনতাকে নতুন এক হুমকির সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তাই, মিম, স্যাটায়ার, হিউমার, কার্টুন ও মর্যাদাহানির মধ্যে পার্থক্যটুকু জানার লক্ষ্যে নাগরিক কোয়ালিশন ও eআরকি যৌথভাবে স্যাটায়ারিস্ট, মিমার, রাজনীতিবিদ, কার্টুনিস্ট, হিউমারিস্ট, সাংবাদিক, আইনজীবী, অ্যাক্টিভিস্টের অংশগ্রহণে শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত হয় মতবিনিময় সভা।
Leave a Reply